Short stories for kids: Tuntun and the Magic Flute - MAHADI STORY WORLD

Short stories for kids: Tuntun and the Magic Flute

 টুনটুন আর জাদুর বাঁশি

Short stories for kids


ধাপ ১: অদ্ভুত বাঁশির খোঁজ 

টুনটুনপুর নামের ছোট্ট গ্রামে থাকত এক দুষ্টু কিন্তু হাসিখুশি ছেলে, নাম টুনটুন। তার কৌতূহল ছিল সীমাহীন। সকালে মোরগ ডাকার সাথে সাথে সে মাঠে দৌড়াত, নদীর পাড়ে ব্যাঙের ডাক শুনত আর গাছের পাতার মর্মর শব্দ উপভোগ করত। একদিন খেলার ছলে সে দূরের জঙ্গলে চলে গেল। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সে হঠাৎ ঝিকিমিকি আলো দেখতে পেল। কাছে যেতেই দেখতে পেল একটি অদ্ভুত বাঁশি পড়ে আছে। বাঁশির গায়ে ছোট ছোট রঙিন তারার নকশা, যা সূর্যের আলোয় ঝিলমিল করছে।

টুনটুন বাঁশিটি তুলে মুখের কাছে ধরতেই চারপাশে অদ্ভুত নীরবতা নেমে এলো। সে একবার হালকা ফুঁ দিল। মুহূর্তেই চারপাশের গাছের পাতা নাচতে শুরু করল, আর পাখিরা যেন মানুষের ভাষায় ফিসফিস করে কথা বলতে লাগল। ভয় ও বিস্ময়ে টুনটুন পিছিয়ে গেল, কিন্তু কৌতূহল তাকে ছাড়ল না। সে বাঁশিটি নিয়ে গ্রামের জ্ঞানী বৃদ্ধ হাশেম দাদুর কাছে ছুটে গেল।

হাশেম দাদু বাঁশি দেখে বিস্মিত হয়ে বললেন, এটি সেই জাদুর বাঁশি যার কথা বহুদিন ধরে গল্পে শোনা যায়। এর সুরে প্রাণীরা কথা বলে, গাছেরা গান গায়, কিন্তু ভুল সুর বাজালে বিপদ নামতে পারে।

টুনটুনের চোখ চকচক করে উঠল। সে ভাবল, আমি যদি সঠিক সুর বাজাতে শিখতে পারি, তাহলে গ্রামের সবাইকে অবাক করে দেব। রাতে সবাই ঘুমালে সে গোপনে আঙিনায় বাঁশি বাজাল। সুর ছড়াতেই আকাশের চাঁদ রংধনুর মতো রঙিন হয়ে উঠল, আর গ্রামের ছাগলগুলো একসাথে নাচতে শুরু করল। টুনটুন আনন্দ পেলেও বুঝল—এ বাঁশি নিয়ে তাকে সাবধান থাকতে হবে।

ধাপ ২: গ্রামের হট্টগোল ও জাদুর সূত্র 

পরের সকালে গ্রামজুড়ে তোলপাড়। ছাগলগুলো বাজারে গিয়ে নিজেরাই দুধ বিক্রি করেছে, মুরগিরা ডিম কিনুন ডিম! বলে হাঁকাহাঁকি করেছে, আর হাঁসেরা নাকি কচি কচি ছড়াগান শোনাচ্ছিল বাচ্চাদের। গ্রামের সবাই হতভম্ব। হাশেম দাদু টুনটুনকে ডেকে বললেন, হ্যাঁরে ছেলে, কিছু করেছিস নাকি? গতরাতে অদ্ভুত সুর শুনেছিলাম।

টুনটুন লজ্জায় প্রথমে চুপ করলেও শেষে সব স্বীকার করল। হাশেম দাদু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “তাহলে শোনো, বাঁশির প্রকৃত সুর শেখার উপায় আছে। গ্রামের পুরনো বটগাছের ফাঁপা কাণ্ডের মধ্যে এক পরী থাকে, সে-ই সঠিক সুর জানে। তাকে ডাকতে হলে তিনটি কাজ করতে হবে: নদীর তীরে বিরল লাল ফুল খুঁজে আনতে হবে, পাহাড়ি ঝরনার জলে বাঁশি ধুতে হবে, আর সৎ হৃদয়ে তিনটি ভালো কাজ করতে হবে।

টুনটুন সাহসী ভঙ্গিতে বলল, আমি পারব! সেদিনই সে নদীর পাড়ে লাল ফুল খুঁজতে গেল। সেখানে সে এক ছোট্ট ব্যাঙের মুখোমুখি হলো। ব্যাঙটি হঠাৎ মানুষের মতো কথা বলে উঠল, আমার পুকুর শুকিয়ে যাচ্ছে। তুমি যদি আমাকে সাহায্য না করো, আমি ফুলের জায়গা বলব না। টুনটুন অবাক হলেও হাসল। সে নিজের বোতলের জল ব্যাঙের পুকুরে ঢেলে দিল। পুকুরটা সাথে সাথে সতেজ হয়ে উঠল, আর ব্যাঙ খুশি হয়ে ফুলের লুকোনো জায়গা দেখিয়ে দিল।

ফুল হাতে নিয়ে সে পরবর্তী কাজের জন্য পাহাড়ি ঝরনার দিকে রওনা দিল। পথে এক আহত পাখিকে দেখে সে সেটিকে স্নেহ করে গাছে বসিয়ে দিল। এভাবেই সে ভালো কাজের তালিকায় আরও একটি কাজ যোগ করল।

ধাপ ৩: পরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ 

লাল ফুল ও ঝরনার জলে ধোয়া বাঁশি নিয়ে টুনটুন বটগাছের কাছে পৌঁছাল। গাছের চারপাশে হালকা আলো ঝিলমিল করছিল, আর বাতাসে এক অদ্ভুত মিষ্টি গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছিল। টুনটুন মাটিতে ফুল রাখল এবং বাঁশি ঠোঁটে নিয়ে একটি নরম সুর বাজাল। হঠাৎ গাছের কাণ্ডের ফাঁক থেকে ক্ষুদ্র এক পরী বেরিয়ে এল। তার ডানা রংধনুর মতো ঝকঝক করছিল।

পরী হেসে বলল, তুমিই কি সেই ছেলে যে বাঁশির সুরে গ্রামটাকে ওলটপালট করে ফেলেছো?
টুনটুন লজ্জিত মুখে উত্তর দিল, হ্যাঁ, আমি ভুল করেছি। আমি সঠিক সুর শিখতে চাই যাতে গ্রাম আবার স্বাভাবিক হয়।

পরী মিষ্টি কণ্ঠে বলল, তুমি সাহসী ও সৎ হৃদয়ের ছেলে। কিন্তু এখনো একটি কাজ বাকি আছে। তোমার গ্রামের ভাঙা সেতুর কারণে শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে

না। তুমি কি গ্রামের মানুষদের ডেকে সেতু মেরামতে সাহায্য করবে?

টুনটুন কোনো দ্বিধা না করে রাজি হলো। সে গ্রামে ফিরে গিয়ে সবার কাছে অনুরোধ করল। প্রথমে কেউ বিশ্বাস করল না, কিন্তু যখন ছাগল ও মুরগির কাণ্ডের কথা মনে পড়ল, সবাই সাহায্য করতে এগিয়ে এল। টুনটুন নিজেও বাঁশি না বাজিয়ে, নিজের পরিশ্রমে পাথর বহন করল, দড়ি বাঁধল আর কাজের নেতৃত্ব দিল। বিকেলের আগেই সেতুটি মেরামত হয়ে গেল।

পরী তখন বটগাছের ডাল থেকে উড়ে এসে বলল, তুমি তিনটি ভালো কাজ সম্পূর্ণ করেছো। এখন আমি তোমাকে বাঁশির আসল জাদু শেখাবো। টুনটুনের চোখ আনন্দে চকচক করছিল।

ধাপ ৪: জাদুর সুর ও আনন্দমুখর গ্রাম

পরী ছোট্ট তারার মতো ঝিলমিল করা এক সুর বাজিয়ে দেখাল। সে বলল, এবার তুমিও বাজাও, কিন্তু মনে রেখো—এই বাঁশির জাদু কেবল ভালো কাজে ব্যবহার করা যাবে।” টুনটুন গভীর মনোযোগে সুরটি বাজাল। মুহূর্তেই চারপাশ রঙিন আলোয় ভরে উঠল। গাছেরা মিষ্টি গান গাইতে লাগল, পাখিরা ছন্দে ছন্দে নাচতে শুরু করল, আর নদীর জল মধুর গানে বয়ে যেতে লাগল।

গ্রামের মানুষ দূর থেকে এ দৃশ্য দেখতে ছুটে এল। তারা অবাক হয়ে দেখল, আগের অগোছালো ঘটনা আর নেই—সবকিছু স্বাভাবিক, বরং আরও সুন্দর। শিশুরা হাসতে হাসতে নাচল, বয়স্করা খুশিতে চোখ মুছল। হাশেম দাদু এগিয়ে এসে টুনটুনের কাঁধে হাত রেখে বললেন, আজ তুমি প্রমাণ করেছ, কৌতূহল আর সৎ মন থাকলে যে কোনো জাদু সঠিক পথেব্যবহার করা যায়।

পরী শেষবারের মতো টুনটুনকে সতর্ক করে বলল, মনে রেখো, বাঁশির জাদু আনন্দ ছড়ানোর জন্য, দুষ্টুমি বা স্বার্থপর কাজে নয়। এরপর সে ঝলমলে আলোয় মিলিয়ে গেল।

সেই দিন থেকে টুনটুন গ্রামে ছোটদের জন্য বাঁশির সুরে গল্প শোনাত, পাখিদের সাথে গান গাইত আর নদীর তীরে নাচত। সে বুঝে গিয়েছিল—জাদু মানে শুধু অদ্ভুত ক্ষমতা নয়, বরং দয়া, বন্ধুত্ব ও আনন্দ ছড়ানোর ক্ষমতা। গ্রামবাসীরাও শিখল, এক ছোট্ট ছেলের সাহস আর সদিচ্ছা পুরো গ্রামকে বদলে দিতে পারে।

টুনটুনপুর তখন থেকে জাদু ও হাসির গ্রাম নামে পরিচিত হলো। প্রতি সন্ধ্যায় বাঁশির মধুর সুর ভেসে বেড়াত আকাশে, আর সবাই জানত—এ সুর ভালোবাসা ও সুখের জাদুর প্রতীক।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
whatsapp" viewbox="0 0 512 512" stroke="none" fill="currentColor">